Flickr Gallery

Friday, March 21, 2014

আলিমুদ্দিন থেকে এবার বাংলায় নেমে এসো বাবা


যারা সিপিএম পার্টিকে হাড়ে হাড়ে চেনেন তাঁরা লেখেন সিপিআইএম। বাকিদের কাছে সিপিএম। আমিও লিখি সিপিএম। সিপিএম এবার ফেসবুক আর ট্যুইটারের শরণাপন্ন হল। অর্থাৎ আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী নীতির কবলে পড়ে গেল সিপিএম। কথাটা শুনে বামেরা রে রে করে তেড়ে আসতেই পারেন। কিন্তু আমার কোন ভয় নেই। কারণ আমি জানি এই দলের নেতৃত্বের কাছে কঠোর সমালোচনাও শিরোধার্য। সিপিএমের ফেসবুক পেজে এই নিয়ে দলের থেকে মন্তব্য এসেছে কিছু ‘শিক্ষিত’ মানুষের বিরুদ্ধে। হয়তো কেউ কেউ মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন যা ওই দলের নেতাদের পছন্দ হয়নি। তাই মন্তব্য আর চেপে না রেখে সরাসরি বালখিল্য আচরণ, “Some learned people are so very much bothered about the opening of CPI(M) s official Facebook Page and Twitter handle and have even gone back to 1848.”

সহজ সরল ভাষায় রাজ্যের হালহকিকত বয়ান করার জন্যে লোকসভা ভোটের আগে সিপিএম কয়েকটা চটি বই ছেপেছে। এই নিয়ে আজকের আনন্দবাজারও উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরির টুনটুনির মতো খাসা খবর ছেপেছে। পড়ে মনে হল, নাক কাটা রাজা রে, দেখতো কেমন সাজা রে! বইগুলির ভাষা সাবলীল। বইগুলির কোথাও আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের কথা লেখা নেই। ফেসবুক আর ট্যুইটারের কোলে বসে আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরোধিতা করা যায় কিনা তা নিয়ে এবার ভাবার সময় এল মনে হচ্ছে। যদিও গণতন্ত্রে সব সম্ভব। পলিটব্যুরোর বুড়ো নেতারা হয়তো বলবেন এটা ঠিক হল না। আমি একবার সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যকে ভুল করে এক গ্লাস ঠান্ডা পেপসি দিয়েছিলাম। সেদিনের সেই চাঁদিফাটা গরমেও তিনি ওই পানীয় বর্জন করে আমেরিকার আগ্রাসনের প্রতিবাদ করেছিলেন। সেই প্রবীণ নেতা আজও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। যোগাযোগ হলে আমি জিজ্ঞাসা করব আজ তিনি কি বলছেন! আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদের দৌলতে তিনি আজ গুগল ও মোজিলা সার্চে পারদর্শী। তিনি লিখতে গেলে আমেরিকান কোম্পানি মাইক্রোসফটের ওয়ার্ড ছাড়া অন্য কিছু ব্যবহার করছেন না। যদিও এখনো তিনি ফেসবুকে নামেননি। মনের জোরে আমেরিকার ফেসবুকের আগ্রাসনকে এখনো তিনি পরিত্যাজ্য করে রেখেছেন মনে হচ্ছে না তো! এখন তিনি পেপসি পান করেননা শরীরের দোহাই দিয়ে। যুগ পাল্টালে মানুষকেও তো পালটি খেতে হয়!

ফেসবুক নিয়ে এখন সিপিএমের সমর্থকদের মধ্যে উদ্দীপনার শেষ নেই। ট্যুইটারে অনেকে অত মনোযোগ দেননা। কিন্তু আলিমুদ্দিনের নেতারা বা নেতৃত্ব কি ভাবছেন! অনেক অনেক উৎসাহী সমর্থক সিপিএমের ফেসবুক পেজে দলকে বলছেন বাংলা ভাষায় ‘আপডেট’ দিতে। এই ব্যাপারে সিপিএমের অনেকদিনের গাফিলতি আছে। দলের উচ্চস্তরের অধিকাংশ নেতা ইংরিজি ভাষা ব্যবহারে বেশি সাবলীল। একেকটি বাক্যের মধ্যে পুরো বিশ্বকে আটকে রাখার মতো ভাষা জ্ঞান। রেললাইনের মতো লম্বা লম্বা বাক্য। গ্রানাইট পাথরের মতো শক্ত শক্ত শব্দ। পুরোটা পড়ে ফেললে দাঁতের ডাক্তার ছাড়া গতি নেই। কিন্তু নিম্নস্তরের বেশিরভাগ নেতা ইংরিজি থেকে সাত যোজন দূরে থাকেন। বাংলা লিখলেও এমন খটমট শব্দের ব্যবহার এবং এত বড় বড় বাক্য যে পড়তে গেলে কথার খেই হারিয়ে ফেলে অনেকে বলেন সিপিএম করতে গেলে পেটে বিদ্যে থাকা চাই। আমি তো সেদিন আমডাঙ্গাতে একজন ছোটনেতাকে বলতেও শুনলাম, আমাদের কথা বুঝতে হলে একটু পড়াশোনা করতে হবে! আমি বলি বাংলায় নেমে এসো বাবা। আলিমুদ্দিনে এবার এক বাংলা অনুবাদকের পাকাপোক্ত ঠাঁই হোক।

যাকগে। কথায় বলে চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে। এতদিন শাসন ক্ষমতায় থেকে দিকজ্ঞান গুলিয়ে ফেলেছিল সিপিএম। নেতারা মনে করছিলেন মাত্র চারটেই দিক আছে – পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর আর দক্ষিণ। তারমধ্যে শুধু তাঁরা পশ্চিমদিকে আমেরিকার দিকে তাকিয়ে ওদের নীতির বিরুদ্ধে গালমন্দ করতেন। এখনকার সিপিএম হয়তো বুঝতে পেরেছে আদতে দশটা দিক। চার দিকে তাকালে শুধু হবেনা। এখন আরও ছয়টি দিকে নজর রাখতে হবে - ঈশান, অগ্নি, নৈঋত, বায়ু, ঊর্ধ্ব ও অধঃ। অধমের অপরাধ ক্ষমা করবেন আপনারা।
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM