Flickr Gallery

Sunday, March 18, 2012

তৃণভক্ত দীনেশ ত্রিবেদী অমর রহে


বিখ্যাত হওয়ার কয়েকটি সহজ উপায় আছে। তার মধ্যে একটি হল – কাপড়চোপড় খুলে ঊর্ধ্ববাহু হয়ে উদোম নৃত্য করা। এই উপায়ে যেকোন মানুষ রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যেতে পারেন। এবং তা যদি মিডিয়ার সামনে করা যায় তবে নিমেষের মধ্যেই সেই মানুষ বিখ্যাত হয়ে যেতে পারেন। রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী ঠিক এই কায়দায় নিজেকে ভারতীয় রাজনীতিতে প্রকাশ্যে এনে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেলেন।

গত পাঁচদিনের কয়েকটি মন্তব্য এবার সামনে আনা যাক। দীনেশ ত্রিবেদী বলেছিলেন প্রথমে তাঁর দেশ, তারপর তাঁর পরিবার, তারপর দল। বলা বাহুল্য, রেল বাজেট প্রস্তাব পেশ করার সময়ে তিনি যাত্রীভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব সহকারে বিচার করে ‘কঠিন’ পদক্ষেপ নেওয়ার সময়ে রেলের রুগ্নদশার অজুহাত দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন ‘আইসিইউ’ থেকে রেলকে বের করতে এবং সমাজের মঙ্গল করতে তাঁকে রেলভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব আনতে বাধ্য হতে হল। ‘দার্শনিক’ দীনেশ ত্রিবেদী এইভাবেই যাত্রীভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাবকে যুক্তিগ্রাহ্য করেছিলেন। এতেই মনে হয় তিনি তাঁর বিপদ ডেকে এনেছিলেন। মমতার অদূরদর্শিতাই যে রেলকে রুগ্ন করেছে সেকথা সবাই জানেন। 

রেলের সুরক্ষা এবং পরিষেবা নিয়ে দীনেশবাবুর ‘মাথাব্যথা’ ছিল বলেই জানি। ‘দেশভক্ত’ দীনেশবাবু বলেছিলেন তাঁর ‘প্রস্তাব’ পাশ করাতে তিনি দেশের সৈনিকের মতো হয়ে লড়ে যাবেন। কিন্তু মমতার দাবড়ানি খেয়ে তাঁর সবকিছুই ‘গুড়গোবর’ হয়ে গেল। তাঁর দেশভক্তি মমতার এক চাঁটিতে ধুলোয় লুটোপুটি খাচ্ছে। তিনি আবার দলভক্ত হয়ে পড়লেন। দেশভক্ত সৈনিক, যিনি প্রথমে দেশ দেখতেন, তারপর পরিবার দেখতেন, তারও পরে দল দেখতেন, তিনিই পদত্যাগ করার সময়ে বললেন, তিনি তাঁর দলের অর্থাৎ মমতার অনুগত সৈনিক! দীনেশবাবু তাঁর দর্শনকে মিথ্যে প্রমাণ করে দিলেন নিজেই। তিনি অনুগত তৃণমূলী সৈনিকের মতো রেলমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেখিয়ে দিলেন তাঁর বলা এবং করার মধ্যে তফাৎ অনেক। 

দীনেশবাবু বলেছিলেন রেল কারোর ব্যক্তিগত সম্পত্তি হতে পারেনা। তিনি কার ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলে রেলকে উল্লেখ করছিলেন তা না বললেও বোঝা যায়। তাঁর পদত্যাগ প্রসঙ্গে তাঁরই দলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় কটাক্ষ করে বলেছিলেন, রেলমন্ত্রী বানানোর সময়ে তাঁকে তো কোন লিখিত চিঠি দিতে হয়নি। তাই রেলমন্ত্রীত্ব থেকে সরানোর সময়ে লিখিত চিঠির প্রসঙ্গ আসছে কি ভাবে? তাঁরই দলের আরেক বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম তো তাঁকে বিশ্বাসঘাতক বলে দিলেন। এই শুনে দীনেশবাবু ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছিলেন, এইরকম হলে কোন ‘ভাল’ লোক তো রাজনীতিতে আসবেন না। সাংসদ কবীর সুমন মাঝখানে ফুট কেটে ব্যক্তিগত রাগ মিটিয়ে নিলেন। কবীর সুমন আজকাল তাঁর দলে একেবারেই পাত্তা পান না। এই কথা বলে তিনি সব জায়গায় কাঁদুনি গেয়ে বেড়ান। তাঁর নড়বড়ে অবস্থান নিয়ে দীনেশবাবুর পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে আবার একপ্রস্থ হাসির খোরাক হয়ে গেলেন। দীনেশবাবু তাঁর দলভক্তি দেখিয়ে তৃণভক্ত হয়ে গেলেন। কবীর সুমনের অবস্থান আরও নড়বড়ে করে দিলেন। 

কেন্দ্র সরকারের দুর্বলতা আবার সামনে চলে এল। গত চারদিন ধরে যে নাটক চলছিল তার অবসান হল। রেলমন্ত্রী ‘দেশভক্ত’ দীনেশ ত্রিবেদী ‘শহীদ’ হলেন। কংগ্রেস পেছন থেকে সাহস জুগিয়ে দীনেশবাবুকে শক্তপোক্ত মানুষ হিসেবে খাড়া করে রেখেছিলেন। কিন্তু মমতার একগুঁয়েমির কাছে দুর্নীতিময় কেন্দ্র সরকারকে আবার মাথা নুয়ে ফেলতে হল। দুর্বল কেন্দ্র সরকার বিপাকে পড়েছে। মমতাকে সামলাতে গিয়ে দিনের পর দিন ফ্যাসাদ বেড়ে চলেছে। দুর্বল কেন্দ্র সরকার মমতার দাপট সহ্য করতে পারলনা। দীনেশ ত্রিবেদীকে বাঁচাতে পারলনা। 

দীনেশ ত্রিবেদী নিজেকে ভগৎ সিং-এর সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। তাঁর পরিণতি তিনি কি জানতেন? তিনি কি রাজনীতির কেন্দ্রে আসার জন্যে এই কান্ডটি করলেন? দীনেশ ত্রিবেদী অমর রহে। ‘দলভক্ত’ দীনেশ ত্রিবেদী চারদিন আদুর গায়ে উদোম নৃত্য করে বিখ্যাত হয়ে গেলেন। মমতার দলে মমতার দাপটে কোন নেতা এত তাড়াতাড়ি বিখ্যাত হতে পারেননি। তিনি একটা নতুন রাস্তা খুলে দিলেন। বিখ্যাত হওয়ার সহজ ফরমুলাটি অন্যান্য ‘ল্যাম্পপোস্ট’কে জানিয়ে দিলেন।
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM