Flickr Gallery

Monday, March 26, 2012

ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি


ছাড়িস না মা। কেঁদে বাঁচতে চাই না। রাণীর মন্ত্রীরা সমস্বরে এই কথাই রোজ বলে ঘুম থেকে উঠছে। আবার শুতে যাওয়ার সময়ে এই বলেই শুয়ে পড়ছে। পাড়ায় পাড়ায় ছিঁচকে চোরেরা গান ধরেছে আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাণীর রাজত্বে। মন্ত্রীরা বেসুরো গলায় তাল মেলাচ্ছে, আমরা সবাই প্রজা। ইহকাল ঝরঝরে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার। দুষ্কৃতীদের পৌষমাস। ভাল মানুষের সব্বোনাশ। চুল্লুপায়ীদের দু’লাখ। কি ভাগ্যিস হাইকোর্ট আছে। নইলে চুল্লু খেয়ে পটল তোলা বেড়ে যেত। বিষ খেয়ে মরলে বীমা কোম্পানি পয়সা ফেরত দেয়না। ভায়া! চুল্লু খেয়ে মর।

শোনা যায় মহম্মদ বিন তুঘলকও পাগলাটে ছিলেন। চোখ ঠিক রাখলে দেখা যায় ইনিও তাই। রেল স্টেশনগুলোর সবুজ রঙ করে ফেল। শহরটার রঙ হোক নীল সাদা। চৌরাস্তার মোড়ে রবীন্দ্র সঙ্গীতের সুর। যানবাহনে প্যাঁকপ্যাকানিতে তাও বেসুরো লাগে। পাঠ্যপুস্তক থেকে কবি সুকান্ত গায়েব। এরপর রক্তের রঙ হয়ে যাবে সবুজ। মনের রঙ কালো! দারণ হবে মাইরি। পচা, তোর বাপের কি রে! আমার ছাগল। আমি যেদিক দিয়েই কাটি। তাতে তোর কি! দশ বছর চুপ থাক তোরা। 

সব কিছুই এখন সাজানো। রাজ্যটা এখন একটা বিউটি পার্লার। ঘটনাগুলো সেজেগুজে বিউটি পার্লার থেকে বেরিয়ে আসছে। জাগরী নাট্যপালা সাঙ্গ হল। সুচিত্রা নাট্যপালা শেষ। কিষেনজি বেঘোরে মারা পড়ল। বেচারা! ঝুলি থেকে বেড়ালের বদলে পটাপট মাও বেরোচ্ছে। পটাপট আত্মসমর্পণ করছে। একেবারে সাধারণ সাদামাটা জীবন। তোরা আবার মাও হয়ে যাবি না তো! হ্যাঁ, এই রাণীর গদি টলমলে হলে আবার আমরা মাও হয়ে যাব কিন্তু। পাবলিক সাবধান। চক্রান্ত চলছে। 

রাণীর দলের গণতন্ত্রে গায়ক ঘায়ল। নিত্য নতুন ফন্দি খুঁজছেন দল থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য। রাণীকে গান দিয়ে তুলোধোনা করে ছাড়ছেন। কিন্তু রাণীর কানে তুলো। সম্পর্ক পুড়ে ছারখার। গায়ক এখন একঘরে হয়ে বসে গিটার বাজিয়ে বাজার মাতিয়ে রেখেছেন। কাঁদুনি গাইছেন। ছেড়ে দে মা কেঁদে বাচি! না না। ছাড়িস না মা। আমরা কেঁদেও বাচতে পারবনা। পাবলিক আমাদের যাত্রাপালার শেষ দেখবে বলছে। মঞ্চ ছেড়ে নামিসনা মা। টিকিট কেটে যাত্রা দেখতে এসেছি। পুরোটা দেখেই ছাড়ব। 

রেলের ধাক্কায় আরেক মন্ত্রী কুপোকাত। নিজেকে ভগত সিং বলে নিজের ঘাড় চাপড়াচ্ছেন। রাণীর যাদুস্পর্শে সতেজ। ছাড়িস না মা। আমাদের সবাইকে করে খেতে দে। এই যাত্রায় ক্ষমা করে দে মা। আমার সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল। এখনই সব কিছু ফুরিয়ে ফেলতে চাইনা মা। শিক্ষামন্ত্রীর মুখে কুলুপ। হ্যান করেঙ্গা। ত্যান করেঙ্গা। ফড়িং-এর মতো লাফালাফি করে দিন দুয়েক খবরের কাগজের মধ্যমণি। তারপর তিনিও মুক ও বধির। ছাড়িস না মা। পাবলিক আমাদের কেঁদেও বাচতে দেবেনা মনে হচ্ছে। 

গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এখন জলভাত। যখন তখন বাঁশ নিয়ে নেমে পড়ছে রাণীর প্রজারা। দে দমাদম। ইঁট পাটকেল। ছুরি তরোয়াল। গুলি বন্দুক। কিছু না পেলে সভাস্থলের চেয়ার টেবিল। তুই বেশি খেয়েছিস। আমাকে ভাগ দিচ্ছিস না রে কেন শালা? পেঁদিয়ে বৃন্দাবন দেখিয়ে দোব। আমাকে চিনিস। আমি কেলে মানিক। আমি হেঁড়ে মাথা। আমি হাতকাটা। আমি চোখ কানা। রাণীর রাজত্বে আজ আমরা সবাই রাজা। ভাগ দে শালা। শুয়োরের বাচ্চা। নইলে দেখ কি করি। নারী ধর্ষণ! বেশ করবো। তুই বাঁচাতে আসবি। তোকেই দল থেকে বের করে দোব শালা। দশ বছর তোরাও চুপ থাক শালা। পরিবর্তনের পাল্লায় পড়ে রাজ্যবাসী জেরবার। ছাড়িস না মা। তোর যাত্রা পালা সাঙ্গ হোক।
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM