Flickr Gallery

Friday, March 9, 2012

দীনেশ ত্রিবেদীর 'রাজনৈতিক বিশ্লেষণ' সঠিক


দীনেশ ত্রিবেদীর মন্তব্যকে ঘিরে রাজনৈতিক চাপান উতোরের সম্ভাবনা একেবারেই নেই বললে চলে। তাঁর মন্ত্রীত্ব রাষ্ট্রের জন্যে প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ণ হলেও তিনি রাষ্ট্রের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক। তাই তাঁর মন্তব্য নিয়ে জলঘোলা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তিনি কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রী। তাঁর দল কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার একটি বড় ঘটক। কিন্তু এই দলটির সদস্যরা আজকাল বিজেপির ঘটকালি করছে। কূল রাখি না তীর রাখি। ত্রিবেদী মহাশয়ের দলের কুলীনতা বজায় রাখতে গেলে কেন্দ্রীয় ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে কোলাকুলি করতে হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এইবার লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ক্ষমতা নাও পেতে পারে। বিশ্লেষকরা আরেকটি দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ক্ষমতালোভী দলের দিকে পাল্লা ভারি দেখছেন। তাই কূলই ধরে রাখা যাক। তীর গোল্লায় যাক!

সম্প্রতি মণিপুর ছাড়া অন্য সব রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের শোচনীয় অবস্থা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশেও ‘রাহুল ম্যাজিক’ ফ্লপ করেছে। রাহুল সুবক্তা না হয়েও আকারে ইঙ্গিতে এবং অভিনয় করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি উত্তরপ্রদেশের মানুষের জন্যে সবচেয়ে বেশি চিন্তিত। গ্রামে গঞ্জে ঘুরে, দলিতদের ঘরে রাত কাটিয়ে হঠাৎ রাহুল গান্ধী গরীব মানুষের কাছের লোক হওয়ার ভান করে নিজেকে ম্যাজিসিয়ান সাজিয়ে শারীরিক ভাবভঙ্গিমা সহযোগে এমন সব বক্তৃতা করতেন যেন মনে হত তাঁর অঙ্গুলিহেলনেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। 

কেন্দ্র সরকারের বড় ঘটক হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার বাঁচানোর তাগিদ সবচেয়ে বেশি থাকা উচিত। কিন্তু তৃণমূল দলটি এখন ঘরের শত্রু বিভীষণ। দীনেশ ত্রিবেদী বলেছেন, তিনি যদি সমাজবাদী পার্টির লোক হতেন তবে তিনি অন্তর্বর্তী লোকসভা নির্বাচন চাইতেন। তাঁর মন্তব্য কংগ্রেসের কাছে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটের মত। রাজ্য বিধানসভায় অভূতপূর্ব সাফল্যের পর এই দলটির দলনেত্রী বহুবার কংগ্রেসকে সরাসরি খোঁটা দিয়ে চলেছেন। শরিকি রাজনীতি থেকে কংগ্রেসের সরে থাকাই ভাল। চাইলে তারা রাজ্য সরকারের সঙ্গ ত্যাগ করতে পারে। প্রতিদিন কংগ্রেস অপমানিত অনুভব করছে। প্রতিনিয়ত দলীয় নেতৃত্বকে খোঁটা খেতে হচ্ছে। বিভিন্ন সমস্যায় কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে সরকারের অন্যতম ঘটক হয়েও মৃদু ভাষায় সরকারের বিরুদ্ধে লোকদেখানি সমালোচনা করছে। কড়া ভাষায় সমালোচনা করার মেরুদন্ড এই দলটির মধ্যে কারোর নেই। দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ক্ষমতালোভী এই দলটি তাই পশ্চিমবঙ্গের তাদের শরিকদের কাছে রোজ অপমানিত হয়ে টিকে থাকছে। এর একটি সুতো দিল্লিতে বাঁধা আছে। 

সুবিধেবাদী রাজনীতির কোন আদর্শ থাকেনা। তাই সু্যোগ বুঝে যেদিকে পাল্লা ভারি হয় সেদিকেই ঝুলে পড়া যেতে পারে। তৃণমূল কংগ্রেসের একমাত্র আদর্শ কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় নিজেদের টিকিয়ে রাখা। ইতিহাস সাক্ষী। যদি কংগ্রেস নিজে থেকেই পশ্চিমবঙ্গের জোট থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয় তবে কেন্দ্রীয় ক্ষমতা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে তৃণমূলকে আর ধর্মসঙ্কটে ভুগতে হয়না। দীনেশ ত্রিবেদীর ‘রাজনৈতিক বিশ্লেষণ’ এইসব সাত পাঁচ চিন্তার ফল। আগাম লোকসভা নির্বাচন হলে সুবিধা হবে তৃণমূলের। কারণ পশ্চিমবঙ্গের নৈরাজ্য শুরু হলেও নয় মাসে মানুষের কাছে সেই আঁচের বিন্দুমাত্র বোধগম্য হতে পেরেছে। যতদিন গড়াবে মানুষ ততই বুঝতে পারবে। তৃণমূলের ওপর মানুষের ঘৃণা ততই বাড়বে। মানুষের কাছে দলটির সঠিক চরিত্র জলের মতো পরিষ্কার হওয়ার আগে লোকসভা নির্বাচন হয়ে গেলে মানুষের মার খেতে হবে না। আর রঙ পালটে কেন্দ্রের ক্ষমতা দখল করতে বেগ পেতে হবে না। কেন্দ্র সরকারের অন্যতম সদস্য এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এইটুকু ভাল করেই জানেন। তাই তিনি তাঁর দলীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ভুল করে জনসমক্ষে এনে ফেলেছেন। সুবিধেবাদী রাজনীতির ইঁদুর দৌড় চলছে। তৃণমূল কংগ্রেস আর কিছুদিন পরেই কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার থেকে তাদের গাঁটছড়া খুলে ফেলতে পারে। রাজ্যের ক্ষমতার ভাগ বাঁটোয়ারা থেকে তখন বাধ্যতামূলকভাবে কংগ্রেসকে সরে যেতে হতে পারে। সময় অপচয় না করে তৃণমূল কংগ্রেস তাদের কুলীনতা বজায় রাখতে বিজেপির কোলে ঢলে পড়বে। দীনেশ ত্রিবেদীর মন্তব্যের ব্যাখ্যা কিংবা ‘ডিগবাজি’ থেকে এই কথাটি পরিষ্কার হয়ে গেল।
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM