Flickr Gallery

Wednesday, July 4, 2012

এক বছরেই তিন হাজার কোটি টাকা ভ্যানিশ




রাজ্যের তিন হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির খবরটা ফাঁস হয়ে গেছে। ‘এগিয়ে থাকা এগিয়ে রাখা’ সংবাদমাধ্যমটি এই খবরটি প্রকাশ না করে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজ্য সরকারকে বাঁচিয়ে দিয়ে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ‘ভগবান ছাড়া কাউকে ভয় না পাওয়া’ সংবাদপত্রটিও দুর্নীতির খবরটি প্রকাশ করতে ভয় পেয়েছে। অথচ গত এক বছরেই এই বিপুল পরিমাণ দুর্নীতি তৃণমূল ও কংগ্রেসের জোট সরকার করে ফেলেছে। গত আর্থিক বছরের এই ব্যাপক দুর্নীতি অ্যাকাউন্ট জেনারেলের (এজি) নজর এড়িয়ে যায়নি।

এত বেহিসেবি খরচ হল কি ভাবে? কে বা কারা এত খরচ করে ফেলল? একদিকে টাকা নেই টাকা নেই বলে চিল চিৎকার চলছে। অন্যদিকে পছন্দ মত ক্লাব পিছু দু লক্ষ টাকার দানছত্র খুলে বসেছে রাজ্য সরকার। বিভিন্ন দফতরের মাইনে ও পেনশন দিতে টাকা কম পড়ছে, কিন্তু শাহরুখ খানের ক্রিকেটদলকে নিয়ে বেলেল্লাপনা করতে টাকার অভাব হচ্ছেনা। মন্ত্রীদের অফিসঘর সাজাতে টাকার অভাব হচ্ছেনা। কলকাতা জুড়ে তেঠ্যাঙা ঝাড়বাতি লাগাতে টাকার অভাব নেই। দুর্নীতিগ্রস্ত রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তাই তদন্ত না হলে এদের ধরা যাবেনা। এরা তো গভীর জলের রুই কাতলা। ডুবে ডুবে জল খেতেই এরা পটু।

বিভিন্ন ধরণের সভায় সাজসজ্জা এবং সেই সব সভায় অতিথিদের ভুরিভোজের টাকা সরকারি কোষাগার থেকে দরাজ হাতে খরচ করা হয়েছে। গত বছর মে মাসে শুধু মাত্র রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করতে গিয়ে ১৫ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গত বছর আগস্ট মাসের ইফতার পার্টি করতে খরচ হয়েছে ৪১ লক্ষ ৩৫ হাজার ৫৮২ টাকা। পুজোর আগে এই আগস্ট মাসে বিভিন্ন ধরণের পুজো কমিটির সঙ্গে সভা করতে খরচ হয়েছে ৪ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। গত বছরই সেপ্টেম্বর ও নভেম্বর মাসে মেয়র পরিষদ বৈঠকে স্রেফ ১৭৪ প্যাকেট খাবারের জন্য খরচ করতে হয়েছে ৬২১৯৬ টাকা। টাকা নেই বলে ঢাক বাজছে এক বছর ধরে। এক বছরের মাথায় ৩০০০ কোটি টাকার দুর্নীতির মধ্যে এই খরচের হিসেবগুলি খুবই সামান্য। এই বিপুল টাকা পুর দফতর থেকে খরচ করা হয়েছিল। পরে হয়তো পুর দফতরকে অন্যান্য খাত থেকে টাকার অঙ্কটি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুকুর চুরি চলছে। মানুষের জন্যে বরাদ্দ টাকায় নিজেদের মধ্যে হরির লুট চলছে।

এজি বেঙ্গলের তরফ থেকে সরকারকে জানানো হয়েছে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা খরচের ঘটনায় আগে থেকে কোন টেন্ডার ডাকা হয়নি। খরচের কোন বিল, ভাউচার পাওয়া যায়নি। কবে খরচ করা হয়েছে তারও হদিশ দিতে পারেনি রাজ্য সরকারের দফতরগুলি। প্রায় সব বিভাগ দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। রাজ্য সরকার এখন মন্ত্রী ও আমলাদের সংসারে পরিণত হয়েছে। অনেক সাংসারিক লোক নিজের সংসারের খরচের কোন হিসেব রাখেন না। পকেটে পয়সা থাকলে দেদার খরচ করে ফেলেন। বাজারে গেলে মাছ, মিষ্টি কিনে থলি ভরে বাড়ি ফেরেন। রাজ্য সরকারের পদস্থ মন্ত্রীরা ও তাদের আমলারা রাজ্যের কোষাগারকে নিজের সংসারের টাকা ভেবে দেদার খরচ করে চলেছেন। তাই আর হিসেব রাখার বালাই নেই। পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে পালে।

খবরে প্রকাশ অর্থ দফতর এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ দুর্নীতি চেপে রাখতে আরেক রকম দুর্নীতি দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে অনুমান করা যায়। বেহিসেবি খরচের সামাল দিতে হয়তো বিল, ভাউচার সব জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। সততার প্রতীক মমতার সরকারের মান বাঁচাতে মমতার দল ও তাঁর জোট শরিক আরেক দুর্নীতিগ্রস্ত দল কংগ্রেসকেও এবার মাঠে নামতে হবে। আরও কয়েক ঝুড়ি মিথ্যে কথা বলার জন্যে কোমর বেঁধে তৈরি হোক বিদ্বজনেরা এবার। সংবাদমাধ্যমগুলি এই খবরটি গোপন করে রাখুক। বাংলা ভাল থাকুক।
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM