Flickr Gallery

Friday, December 23, 2011

বাংলার ঘাড়ে এখন 'ন্যানো'র ভূত

সিঙ্গুরের ভূত এবার মাঠে নামছে। ‘জোর করে জমি অধিগ্রহণ করা যাবেনা’ এইরকম সুরে আন্দোলন করে সিঙ্গুরে ‘ন্যানো’ গাড়ি তৈরির কাজ মাঝমাঠেই মেরে ফেলেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। পশ্চিমবঙ্গের গরম মাথার উন্নয়নবিরোধী লোকেদের ঠান্ডা মাথার খুন। খুন হল সিঙ্গুরের ন্যানো। তাঁর সেই ‘কৃষক দরদী’ খুনের কিনারা আজ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। বাংলার মানুষ ‘ন্যানো’খুনীকে পুরস্কৃত করে রাজসিংহাসনে চাপিয়ে দিয়েছেন। সিংহাসনের নিচেই লুকিয়ে রয়েছে ‘ন্যানো’র ভূতজ্বালাতন শুরু করেছে।

কাটোয়ায় ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশনের (এনটিপিসি) তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির জন্যে প্রাক্তন সরকার প্রয়োজনীয় ১১০০ একর জমির মধ্যে ৫৫০ একরের দাম জমি মালিকদের মিটিয়ে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছিল বাকি জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া একেবারে শেষের মুখে থাকলেও বিধানসভা নির্বাচন এসে পড়লে সেই কাজ অসম্পূর্ণ হয়ে পড়ে থাকল। এরপর হয়ে গেল পরিবর্তন। ক্ষমতায় এল নতুন সরকার। মমতার সরকার। ‘নীতি’ বানিয়ে বলে দেওয়া হল জমি অধিগ্রহণ আর সরকারের কাজ নয়। ওতে বর্তমান সরকারের ‘কৃষক দরদী’ ভাবমূর্তিতে কালি লেগে যাবে। তাই এখনকার নীতি অনুযায়ী, যে শিল্প করবে তাকেই কৃষকের কাছ থেকে জমি বাগিয়ে নিতে হবে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এসে শিল্পপতিরা জমি অধিগ্রহণ করতে চাইছেন না। ‘ন্যানো’র ভূত ওদের তাড়া করছে। ‘শিল্পী’রা চাইছেন জমি আদায়ের ঝামেলা সরকার নিক।
এ রাজ্যে জমি বহু বিভক্ত। জমির মালিকও বহু। বেশির ভাগ রাজ্যে ভূবন্টণ হয়নি বলে শিল্পপতিরা সেখানে দালাল নামিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী জমি কিনতে সক্ষম। এরাজ্যে দালালরাও দু দশ কাঠা বা বিঘেটাক কিনতে তৈরি আছে। কিন্তু হাজার হাজার একর জমি কেনা দালালদের ক্ষমতার বাইরে। এর ফলে নতুন ‘শিল্পী’রা তাদের শিল্প সম্ভার বাংলার মাঠে নামাচ্ছেনা। বলা হচ্ছে ‘ন্যানো’র ভূত বাংলার মাঠে ঘাপটি মেরে বসে আছে বলেই এইরকম হচ্ছে। লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়তে রাজি। জমি আদায় করুক সরকার এরকমই তাঁরা দাবি করেছেন। অথচ নতুন সরকারের জমি অধিগ্রহণ নীতি বলছে জমি আদায় করবে ‘শিল্পী’রা। কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঘাড় মটকে দিয়েছে ‘ন্যানো’র ভূতএবার লার্সেন অ্যান্ড টুব্রোর ঘাড় মটকাবে বলে বসে আছে। সেই ভয়ে এই কোম্পানি মাঠে না নেমেই বলছে আগে ওঝা ডেকে ‘ভূত ঝাড়ো’।
গেঁওখালিতে জাহাজ তৈরির কারখানা ঘাড়েও ‘ন্যানো’র ভুত। জামুরিয়ায় ভূষণ স্টিলের ইস্পাত প্রকল্প রঘুনাথপুরের তিনটি ইস্পাত প্রকল্প জয় বালাজি, আধুনিক শ্যাম স্টিল, টেক্সম্যাকো রেল ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থার ইস্পাত প্রকল্প, রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর সিমেন্ট প্রকল্প, পানাগড়ে হিন্দুস্থান ন্যাশনাল গ্লাস সংস্থার প্রকল্প, জোকায় টেকনো ইন্ডিয়ার হাব তৈরির প্রকল্পের ঘাড়ে চেপেছে একই ভূত  বলা হচ্ছে, সব মিলিয়ে মমতার সরকারের কাছে বিনিয়োগের যে প্রস্তাবগুলি জমা পড়েছে, তাদের অধিকাংশের জমি সংস্থানের ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি শিল্প দফতর। অর্থাৎ প্রতিশ্রুতির ঘাড়েও চাপতে চাইছে ‘ন্যানো’।
শিল্পে লগ্নির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল জমি। বর্তমান সরকার ‘ন্যানো’ ভূতের ভয়ে জমি অধিগ্রহণ নীতির দোহাই দিয়ে ‘লেজ’ গুটিয়ে নিয়েছে আগেই। সমস্যার সমাধান দূর অস্ত। শিল্পের ভবিষ্যত অন্ধকার। চাকরির সু্যোগ করে দেওয়ার নামে চোখে সরষে ফুল দেখছে বর্তমান সরকার। ‘কৃষক দরদী’ বর্তমান সরকারকে শেষে না কৃষকরাই ‘লেজে গোবরে’ করে ফেলে! ‘ন্যানো’ এখন মেঠো ভূত।
এই ভূতের গল্পে আবার কিছু মাতাল নায়ক আছেন। তাঁরা বলছেন লগ্নিকারীরা যদি নিজের পছন্দের জায়গায় শিল্প করতে জমি চাইছেন তা তাঁরা দিতে পারবেন না। মাতালরা বলছেন যে তাঁরা যে জমিতে শিল্প করতে বলবেন সেই সব জমিতেই ‘শিল্পী’রা এসে শিল্প করুন। ‘শিল্পী’রা মনে মনে হয়ত বলছেন, একে তো ‘ন্যানো’র ভূত, তার ওপর মাতালদের মামদোবাজি! মাতালরা এখন সব শিল্পপতিদের জঙ্গল দেখিয়ে বলছেন, জঙ্গলে চলে যান, বনে বাদাড়ে একেবারে নিরিবিলিতে শিল্প করুন। ওখানে জমি অনেক। ‘শিল্পী’রা মাতলামি দেখে মনে মনে হাসছেন। বাংলার মাঠেই শুধু ‘ন্যানো’ ভূতের আড্ডা। তাই দূরে দাঁড়িয়ে হাসাহাসি করলে ক্ষতি নেই। মাঠে না নামলে ‘ন্যানো’ ভূতের তাড়া খাওয়ার ভয় নেই। আর বাংলায় বলে, মাতালদের আবার ভূতের ভয়! তাই বাংলার মাতালদের ‘ন্যানো’ ভূতের ভয় নেই। দিব্যি সকাল বিকেল সুগন্ধী সুস্বাদু পানীয় সহযোগে ফুর্তি করো আর পাঁকে বসে পাঁক ছিটিয়ে দোল খেলো। রাধা কৃষ্ণের লীলা চলুক। গোল্লায় যাক শিল্প। প্রতিশ্রুতিটুকু বেঁচে থাকলেই হল।
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM